শৌচাগারে তরুণীর লাশ, রক্তাক্ত নানা-নানি কাতরাচ্ছিলেন ঘরের সামনে
রাত দুইটা। হঠাৎ করে ঘর থেকে শোনা যায় চিৎকার। বাড়ির লোকজন গিয়ে দেখেন গলায় রক্তাক্ত জখম নিয়ে ঘরের সামনে কাতরাচ্ছেন বৃদ্ধ দম্পতি। এর মধ্যেই তাঁরা বলেন তাঁদের নাতনি কোথায় খুঁজে দেখতে। একপর্যায়ে খোঁজাখুঁজি করে ঘরের শৌচাগারে পাওয়া যায় তাঁদের নাতনির লাশ।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ পৌরসভার দক্ষিণ গাছবাড়িয়া নয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। নিহত তরুণীর নাম আরজু আকতার (২০)। তিনি নানাবাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। তাঁর বাড়ি উপজেলা কাঞ্চনাবাদ এলাকার এলাহাবাদ গ্রামে। তিনি উপজেলার একটি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আহত দুজন হলেন আবদুল হাকিম (৭৫), ফরিদা বেগম (৬০)। তাঁরা দুজন আরজুর নানা-নানি। তাঁদের আহত অবস্থায় প্রথমে চন্দনাইশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থা শঙ্কাজনক হওয়ায় দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবদুল হাকিম ও ফরিদা বেগম একটি সেমিপাকা ঘরে থাকতেন। পাশে তিনতলা ভবনে তাঁর দুই ছেলের পরিবারের সদস্যরা থাকেন। গত বৃহস্পতিবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন হাকিম–ফরিদার নাতনি আরজু। তিনিও নানা-নানি যে ঘরে থাকেন, এর একটি কক্ষে থাকতেন। গতকাল রাতে সেখানে আসেন নাজিম উদ্দিন (২৮) নামের এক যুবক। তিনি আরজুর নানি ফরিদার বোনের ছেলে। তিনিও সেমিপাকা ঘরটিতে রাতে ঘুমাচ্ছিলেন।
নিহত আরজুর মামি ও আহত বৃদ্ধ দম্পতির ছেলের বউ রিমা আকতার বলেন, ‘রাতে চিৎকার শুনে ঘরে গিয়ে দেখি আমার শ্বশুর-শাশুড়ি রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছেন। আমাকে শাশুড়ি বলেন, নাজিম আমার নাতিকে কোথায় নিয়ে গেছে দেখো। এরপর আমরা আরজুকে খুঁজতে থাকি। একপর্যায়ে ঘরের শৌচাগারে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। আরজুকে গলা চেপে ও শ্বাসরুদ্ধ করে হয়তো খুন করা হয়েছে। তাঁর গলায় দাগ রয়েছে। মুখেও ওড়না গোঁজা ছিল।’
রিমা আকতার আরও বলেন, পরিবারের সদস্যরা ধারণা করছেন, হয়তো রাতে শৌচাগারে যাওয়ার সময় নাজিম কোনো কারণে আরজুকে শ্বাসরোধে খুন করেন। আরজুর নানা-নানি এগিয়ে আসায় তাঁদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করে পালিয়ে গেছেন। আহত ফরিদার অবস্থা শঙ্কাজনক বলে জানান তিনি।
অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়ায়। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। ফলে তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আরজুকে শ্বাসরোধে খুন করা হয়েছে। তাঁর নানা-নানি গলায় রক্তাক্ত জখম নিয়ে চিকিৎসাধীন। অভিযুক্ত নাজিমকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন