শেষ পর্যন্ত মোকাররমকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে হয়নি - NCN NEWS

সর্বশেষ

Home Top Ad

Post Top Ad

Blogger Terms of Service·Privacy·Content Policy Add, remove and edit gadgets on your blog. Click and drag to rearrange gadgets. To change columns and widths, use the Theme Designer. Configure HTML/JavaScript Home Top Ad Page loaded.Getting gadget data

বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫

শেষ পর্যন্ত মোকাররমকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে হয়নি

 

শেষ পর্যন্ত মোকাররমকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে হয়নি


রাশমনা আপন ঘর বৃদ্ধাশ্রমের নিবাসী মোকাররম হোসেন ৫ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যানছবি: সংগৃহীত

‘মোকাররম কাকাকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে হয়নি। আল্লাহ তাঁর জন্য সুন্দর এক বিদায় লিখে রেখেছিলেন। দিনাজপুরে নিজ বাড়িতে তাঁকে দাফন করেছেন পরিবারের সদস্যরা।’

কথাগুলো বলছিলেন মো. আরিফুর রহমান। তিনি ‘রাশমনা আপন ঘর বৃদ্ধাশ্রম’ ও ‘ভালো কাজের হোটেল’-এর প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর বৃদ্ধাশ্রমেই ছিলেন মোকাররম। তাঁর পুরো নাম মোকাররম হোসেন (৭০)।

বৃদ্ধাশ্রমে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে মোকাররমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার (৫ এপ্রিল) মারা যান তিনি।

রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আরিফুরের বৃদ্ধাশ্রমটি অবস্থিত। গত বছরের ডিসেম্বরে মোকাররমকে সেখানে আনা হয়েছিল। এর পর থেকে তিনি এখানেই ছিলেন।

বৃদ্ধাশ্রমে আনার পর মোকাররম শুধু দিনাজপুরে নিজের গ্রামের নামটি বলেছিলেন বলে জানান আরিফুর। তিনি বলেন, এর বাইরে মোকাররম আর কোনো তথ্য জানাননি। পরিবারে কে কে আছেন, কী তাঁদের নাম-পরিচয় বা ঠিকানা, কেন তিনি বাড়ি ছেড়েছেন—মোকাররম জীবিত থাকা অবস্থায় এসব তথ্য জানাতে চাননি। এসব তথ্য না জানায় মোকাররম মারা যাওয়ার পর তাঁর লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের পরিস্থিতি তৈরি হয়।

আরিফুর বলেন, লাশটি বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনে মন সায় দিচ্ছিল না তাঁর। তা ছাড়া বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ দাফনের ক্ষেত্রে আইনিসহ নানা ঝামেলা আছে। তাই লাশটি ফ্রিজিং গাড়িতে রেখেই ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াসহ দিনাজপুরের সংশ্লিষ্ট এলাকায় খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন তিনি। এতে সফলও হন। শেষ পর্যন্ত মোকাররমের দ্বিতীয় ছেলে ও ভাইয়ের ছেলে এসে লাশটি নিয়ে বাড়িতে দাফন করেন।


কমলাপুর থেকে বৃদ্ধাশ্রমে

রাজধানীর কমলাপুরে আরিফুরের একটি ‘ভালো কাজের হোটেলে’ আছে। সেখানে গত ডিসেম্বরে খেতে এসেছিলেন মোকাররম। আরিফুর বলেন, হোটেলের স্বেচ্ছাসেবকেরা জানতে পারেন, এই বৃদ্ধ লোকটির থাকার জায়গা নেই। তা ছাড়া তিনি তখন অসুস্থও ছিলেন। পরে তাঁকে বৃদ্ধাশ্রমে নেওয়া হয়।

আরিফুর বলেন, মোকাররমকে বৃদ্ধাশ্রমে আনার পর আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে একটি ফরম পূরণ করা হয়েছিল। তখন তিনি নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন নিরাপত্তাকর্মী। তবে কোথায় কাজ করতেন, তা তিনি উল্লেখ করেননি।

রাস্তায় পড়ে থাকা, অসুস্থ, অসহায়, যাওয়ার কোনো জায়গা নেই—এমন প্রবীণদেরই শুধু এই বৃদ্ধাশ্রমটিতে রাখা হয় বলে জানান আরিফুর। তিনি বলেন, তাই বৃদ্ধাশ্রমটিতে ছেলেমেয়ের কোনো মা–বাবাকে রেখে যাওয়ার সুযোগ নেই। এখানে থাকা কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। বৃদ্ধাশ্রমের কোনো প্রবীণ নিবাসী মারা গেলে তাঁরা লাশের দাবিদার খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। তবে দাবিদার না পাওয়া না গেলে তখন আইনগত, পুলিশিসহ নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। এসব ঝক্কির মধ্য দিয়ে বেওয়ারিশ লাশ দাফন করতে হয়।

২০২২ সালে চালুর পর এখন পর্যন্ত বৃদ্ধাশ্রমটির যতজন প্রবীণ নিবাসী মারা গেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন বলে জানান আরিফুর। দাবিদার না পাওয়া লাশগুলো বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা।

বছরখানেক আগের একটি ঘটনা উল্লেখ করেন আরিফুর। তিনি বলেন, বৃদ্ধাশ্রমে থাকা এক প্রবীণ নিবাসী একটি মুঠোফোন নম্বরে প্রায়ই কথা বলতেন। তিনি মারা গেলে তাঁরা সেই নম্বরে ফোন করেন। নম্বরটি ওই ব্যক্তির ছেলের। ছেলেকে বাবার মৃত্যুর খবর জানানো হয়। দাফনের জন্য বাবার লাশ নিয়ে যেতে বললে ছেলে রেগে যান। বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষকে লাশটি দাফন করে ফেলতে বলেন। আর তা না পারলে লাশ ফেলে দিতে বলেন। পরে অবশ্য ছেলে আসতে রাজি হন। লাশটি আজিমপুরে দাফন করা হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages